রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১২

পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে


২০১১-১২-১২

মানুষ একসময় ঝর্ণার পানিপ্রবাহের সাহায্যে গম পিষবার জন্য জাঁতা ঘুরিয়েছে। সে সময় বিদ্যুৎশক্তি সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণাই ছিল না। ঝর্ণা, জলপ্রপাত, নদীর স্রোতের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণা মানুষের মাথায় এসেছে অনেক পরে। ১৮৩১ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে পরীক্ষামূলকভাবে দেখেন যে, চুম্বকের পাশে তারের কুণ্ডলীকে দ্রুত ঘোরালে তার মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের উদ্ভব ঘটে। তার এই আবিষ্কারকে নির্ভর করে একাধিক ইঞ্জিনিয়ারের চেষ্টায় ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে এসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্মিত হয় ডায়নামা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ঝর্ণা, জলপ্রপাত, নদীর স্রোতকে বিশেষভাবে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় ডায়নামার সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন। নলের সাহায্যে পানি প্রবাহিত করে ডায়নামার চাকা ঘুরিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তাকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে হাইড্রো ইলেকট্র্র্র্র্র্র্রিসিটি। বাংলায় আমরা একে বলি, পানি বিদ্যুৎ অথবা জলবিদ্যুৎ। এই উপমহাদেশে প্রথম পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মিত হয় দার্জিলিং শহরে ১৮৯৭ সালে। ঝর্ণার পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস'া হলো। দার্জিলিংয়ে এটা করা সহজ হয়েছিল, কারণ ঝর্ণার প্রবাহ এখানে সারা বছর প্রায় একই রকম থাকে। এর একটা কারণ হলো, দার্জিলিংয়ে শীতকালেও বেশ কিছু পরিমাণে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি পাহাড় থেকে প্রবাহিত হয় ঝর্ণার আকারে। তবে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন উত্তর ভারতে সেভাবে সাফল্য পেতে পারেনি। দক্ষিণ ভারতের অনেক জায়গায় তা পেয়েছে যথেষ্ট সাফল্য। ব্রিটিশ আমলে কর্ণফুলী নদীর পানিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যাকে বাস-বে রূপদান সম্ভব হয় পাকিস-ান আমলে। কর্ণফুলী নদীতে এক জায়গায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখে তার প্রবাহের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬২ সাল থেকে। বাংলাদেশের অন্য জায়গা পাহাড়ি নয়। এখানে নদীর ঢাল সামান্য। এ রকম নদীর পানিপ্রবাহ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার জন্য যথেষ্ট উঁচু থেকে নিচুতে পানি প্রবাহিত হওয়ার প্রয়োজন হয়। এর ফলে পানির স'ায়ীত্তিক শক্তি পরিণত হয় পানির গতিশক্তিতে। পানির গতিশক্তি ঘোরাতে পারে বিশেষভাবে নির্মিত ডায়নামার চাকা। গতিশক্তি থেকে উৎপন্ন হতে পারে তড়িৎশক্তি বা চলতি কথায় যাকে বলা হয় পানিবিদ্যুৎ। পানিবিদ্যুৎ তৈরিতে অনেক ক্ষেত্রে অনেকগুলো বাস-ব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন পানি ধরে রাখার জন্য কৃত্রিম হ্রদের। এই হ্রদ থেকে বিশেষ নলের সাহায্যে পানি প্রবাহিত করে এনে ঘোরানো হয় ডায়নামার বিশেষ ধরনের চাকা, যাকে বলা হয় টারবাইন। কৃত্রিম হ্রদে অনেক ক্ষেত্রে জমতে থাকে পলিমাটি। পলিমাটি জমে কৃত্রিম হ্রদ ভরাট হলে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে পড়ে অকেজো। এ ছাড়া যেকোনো নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে আটকালে ওই নদীতে পানির প্রবাহ মন'র হয়। এর ফলে নদীর খাতে জমতে থাকে পলিমাটি। নদীর খাত পলিমাটিতে ভরে গেলে ওই নদী দিয়ে পানিপ্রবাহের সময় সৃষ্টি হয় আগের তুলনায় বেশি বন্যা। কারণ নদীর দুই ধারে নদীর পানি উপচে পড়ে। ইংরেজি ভাষায় ‘ড্যাম’ বলতে বোঝায় কোনো নদীর ওপর দেয়া উঁচু আড়াআড়ি বাঁধকে। ড্যাম কথাটার বাংলা অনেকে করেন ‘ভেড়ি’। ভেড়িবাঁধ দিলে তার এক পাশে নদীর পানি জমে কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হয়। ইংরেজিতে ব্যারাজ বলতেও বোঝায় নদীর ওপর দেয়া আড়াআড়ি বাঁধ। তবে এই বাঁধ ভেড়ির মতো অত উঁচু হয় না। এ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় না কোনো কৃত্রিম হ্রদের। ব্যারাজ শব্দের বাংলা অনেকে করেন ‘জাঙ্গাল’। গঙ্গার (পদ্মার) ওপর ভারত সরকার নির্মাণ করেছে ফারাক্কা ব্যারাজ। ভেড়ি ও জাঙ্গালের মধ্যে থাকে অনেক পানি কপাট (Sluice Gates)। এগুলো তাদের ইচ্ছামতো খুলে ও বন্ধ করে ভেড়ি ও জাঙ্গালের মধ্যে দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত করা চলে। সাধারণত জাঙ্গাল তৈরি করে কৃষিতে পানি সেচের ব্যবস'া করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে তখনকার ভারতের সিন্ধু প্রদেশে সিন্ধু নদীর ওপর ১৯৩২ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল সক্কর ব্যারাজ। এর ফলে সিন্ধু নদীর পানি বিশেষভাবে সেচের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। ভারত সরকার ফারাক্কায় যে ব্যারাজ নির্মাণ করেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গে কৃষির কোনো উন্নতি হয়নি। আসলে এই জাঙ্গাল নির্মিত হয়েছিল শীতকালে গঙ্গার পানি আটকে তা বিশেষ খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে ভাগীরথী নদীতে ফেলার জন্য। এভাবে ভাগীরথী নদীতে শীতকালে পানির প্রবাহ বাড়িয়ে কমানোর চেষ্টা হয়েছিল কলকাতা বন্দরে পলি জমার সমস্যাকে। কিন' বাস-বে এই সমস্যার সমাধান হয়নি। ফারাক্কা জাঙ্গালে গঙ্গার পানির ধাক্কা খেয়ে এখন গঙ্গার খাত ক্রমেই সরে যাচ্ছে উত্তরে; পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার দিকে। মালদহ জেলায় এর জন্য সৃষ্টি হচ্ছে বড় রকমের ভাঙন। গঙ্গা নদী ক্রমেই উত্তর দিকে সরে যাবে। উত্তর দিকে সরে যেয়ে তা নতুন খাতে প্রবাহিত হতে থাকবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। এ রকমই অনুমিত হচ্ছে। আর তাই ফারাক্কায় যে জাঙ্গাল নির্মিত হয়েছে তা হয়ে পড়বে বিশেষভাবে অকেজো। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফারাক্কা হলো মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের নাম। ফারাক্কা জাঙ্গালের এক দিকে হলো এই গ্রাম।
এখন আমরা শুনছি ভারতের মনিপুর রাজ্যে বরাক নদীর ওপর একটি ভেড়ি নির্মাণের সিদ্ধান- গ্রহণ করা হয়েছে, যার সাহায্যে বরাক বা বক্রবাক নদীর পানি আটকে করা হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বরাক নদীর উদ্ভব হয়েছে নাগা মনিপুর জলপ্রপাত থেকে। বরাক নদী মনিপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসে প্রবেশ করেছে আসামের কাছাড় জেলায়। ওই জেলার মধ্য দিয়ে তা প্রবাহিত হয়ে এসে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। সিলেটে জেলায় প্রবেশ করে তা দু’টি শাখানদীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি শাখার নাম হলো সুরমা আর একটি শাখার নাম কুশিয়ারা। কুশিয়ারা নদীকে এক সময় বলা হতো বক্রবাক বা বরাক। কিন' এখন আর তা বলা হয় না। কুশিয়ারা ও সুরমা নদী একত্র হয়ে উদ্ভব ঘটেছে কালনী নামক নদীর। কালনী নদী এসে পড়েছে ব্রহ্মপুত্রে। কালনী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহের নাম হলো মেঘনা। টিপাই একটি নদীর নাম। টিপাই নদীর উদ্ভব হয়েছে ভারতের মিজোরাম প্রদেশের লুসাই পাহাড়ে। সেখান থেকে তা প্রবাহিত হয়ে এসে মনিপুরে মিলিত হয়েছে বরাক নদীর সাথে। যেখানে বরাকের সাথে টিপাই নদী মিলিত হয়েছে তার কাছের একটি গ্রামের নাম হলো টিপাইমুখ। এই টিপাইমুখ গ্রামে টিপাই ও বরাক নদীর মিলিত ধারা, যা বরাক নামেই পরিচিত, তার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে টিপাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ভেড়ি। এই ভেড়ি নির্মাণ করা হলে বরাক নদীতে আর আগের মতো পানি আসবে না। বরাক নদীতে পানির অভাব হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে আসামের কাছাড় জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে ঘটবে পানির অভাব। পানির অভাব ঘটবে মেঘনা নদীতেও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলছেন, টিপাইমুখে ভেড়ি নির্মাণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন' ক্ষতি হওয়ার বেশ সম্ভাবনা আছে। আর তাই প্রয়োজন মনমোহন সিংয়ের বচনকে যাচাই করে গ্রহণ করা। নেপাল ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশি নদী। নেপাল-ভারত সীমানে- ভারত কুশি নদীর ওপর নির্মাণ করেছে জাঙ্গাল। এই জাঙ্গালের দরুন কুশি নদীতে নেপালে এবং ভারতের বিহার প্রদেশে এখন আগের চেয়ে হচ্ছে অনেক বেশি বন্যা। ২০০৮ সালে কুশি নদীতে যে বন্যা হয়েছে তার ফলে নেপালে গৃহহীন হয়েছে ৫০ হাজার এবং বিহারে নাকি ৩০ লাখ মানুষ। নেপাল অভিযোগ করেছে, ভারত কুশি নদীর ওপর যে জাঙ্গাল তৈরি করেছে, তার জন্য দেয়া উচিত ছিল নদীর দুই তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্ত করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (Embankment)। কিন' ভারত সেটা দেয়নি। এ ছাড়া ভারত কর্তৃপক্ষ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে দেখিয়েছে উদাসীনতা এতে দুর্বল বাঁধ ভেঙে হতে পেরেছে ভয়াবহ বন্যা। নেপালের এই অভিযোগ কতটা সত্য, আমরা তা বলতে পারি না। বরাক নদীর ওপর ভেড়ি নির্মাণের ফলে হতে পারে এ রকম বন্যা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মনিপুর, আসামের কাছাড় এবং বাংলাদেশের সিলেট জেলার অধিবাসীরা। মনমোহন সিং বলছেন, টিপাই ভেড়ি বাংলাদেশের কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। কিন' তা অবশ্যই হতে পারে একাধিকভাবে ক্ষতির কারণ। বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক কারণে টিপাই ভেড়ির বিরোধিতা করছেন না। বিরোধিতা করছেন ভৌগোলিক কারণে। বরাক কেবল ভারতের নদী নয়, বাংলাদেশেরও। তাই আন-র্জাতিক প্রথানুসারে বরাক নদীর ওপর কোনো পরিকাঠামো নির্মাণ করার আগে ভারতের উচিত বাংলাদেশকে এর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে জানানো। কিন' ভারত তা জানাতে চাচ্ছে না। কোনো পানিবিদ্যুৎ জননকেন্দ্র স'াপনে আগে ভালো করে হিসাব করা উচিত, যে নদী থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হবে, তার অববাহিকা থেকে কত পানি প্রতি বছর ওই নদীতে এসে পড়ে। এর কত অংশ মাটিতে শুষে নেয়। বছরের কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় এবং নদীতে সর্বাপেক্ষা পানির পরিমাণ ও পানির স্রোত সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, আর কখনোই বা নদীতে সবচেয়ে কম পানি থাকে। বরাক নদীতে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন- সবচেয়ে বেশি পানি থাকে। কারণ এই সময় ওই অঞ্চলে আমাদের দেশের মতোই দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমি বায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। অন্য সময় কিছু বৃষ্টিপাত হলেও তার পরিমাণ খুব কম। আবার সব বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সমান হয় না। সে জন্য বরাক নদীতে আমাদের দেশের নদীর মতোই সব সময় পানির প্রবাহ একই থাকে না। এর জন্য নদীর পানিপ্রবাহের গতিশক্তি কমবেশি হয়। পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বরাক নদীতে দিতে হবে যথেষ্ট উঁচু ভেড়ি; যাতে কৃত্রিম হ্রদ বা পানি সঞ্চয় আধারের আয়তন ও গভীরতা এমন হতে পারে যে,পানির স্রোত শীত ও গ্রীষ্ম উভয়কালেই ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা বরাক নদীর পানিপ্রবাহ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞাত নই। ভারত সরকার এ নদী সম্পর্কে আমাদের দিতে চাচ্ছে না প্রাসঙ্গিক তথ্য ও উপাত্ত। ভারত সরকারের আচরণ আমাদের কাছে তাই মনে হচ্ছে রহস্যজনক। আমরা তাদের আশ্বাসে পারছি না আশ্বস্ত হতে। বাংলাদেশের মানুষ তাই ভারত সরকারের ওপর হচ্ছে ক্ষুব্ধ। কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশে এই ক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করতে পারেন। কিন' বাংলাদেশের মানুষের এ ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষোভ কেবল ভারতবিরোধী মনোভাব থেকে উদ্ভূত হচ্ছে- এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। ভারত সরকার ১৯৭৫ সালে বলেছিল, ফারাক্কা জাঙ্গাল বাংলাদেশের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। কিন' আমরা এখন আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি যে, এই জাঙ্গাল বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠেছে এক মহা ক্ষতিরই কারণ। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ হলো যথেষ্ট বাস-ব অভিজ্ঞতাভিত্তিক। এর মূলে কেবলই কোনো ভারতবিরোধী রাজনীতি কাজ করছে না- এটা থাকতে হবে ভারতীয় নেতাদের উপলব্ধিতে, যদি তারা চান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে মসৃণ করে তুলতে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ বাংলাদেশ হলো একটা গণতন্ত্রমনা উদার, মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট কর্মঠ এবং রাজনীতি সচেতন। সর্বোপরি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস'ান এমন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দেশটিকে তার নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না।’ মজিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।’ যদি তা-ই হয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নদীর পানি নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, তাতে মধ্যস'তা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের সাথে বিশেষ মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আগের তুলনায় এখন অনেক সহজেই পড়তে পারে ভারতের ওপর। নদী বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। একসময় নদী নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল কানাডা ও মার্কিন যুক্তরষ্ট্রের মধ্যে। কিন' এই বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পেরেছে খুবই শানি-পূর্ণভাবে। একসময় নদী নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে। কিন' এই বিরোধও তারা মেটাতে পেরেছেন শান্তিপূর্ণভাবে। মার্কিন সদিচ্ছা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এনে দিতে পারে নদী-বিরোধের ক্ষেত্রে একটি শানি-পূর্ণ সমাধান। যুক্তরাষ্ট্র অতীতে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে রেখেছে বিশেষ প্রভাব। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস-ান যুদ্ধ সংক্ষিপ্ত হতে পেরেছিল মার্কিন চাপে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত বাংলাদেশ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছিল ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে এখনো যথেষ্ট প্রভাব ফেলতেই পারে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
গত সংখ্যার সংশোধনী
গত সংখ্যায় ভুলবশত ছাপা হয়েছিল- ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পরাজিত হয়েছিল জার্মানি। জার্মান সৈন্য পৃথকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সেনাপতিদের কাছে।’ আসলে সেখানে হবে- ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও পরাজিত হয়েছিল জার্মানি। জার্মান সৈন্য পৃথকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সেনাপতিদের কাছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন